
রাত ১০ টা বেজে ৩৯ মিনিট, আমরা অনেকেই
দাঁড়িয়ে আছি কবরস্থানে। আকাশের চাঁদটা
উজ্জ্বলভাবে আলো ছড়াচ্ছে। আমার
পাশে কয়েকজন পুলিশ আছে, আর কয়েকটা
ভাড়া করা লোক জেরিনের কবর খুঁড়তেছে।
.
কিন্ত অনেক্ষণ ধরে কবর খুঁড়ার পরেও
কোনো হদিস পেলনা ওরা জেরিনের লাশের।
একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল তখন। মাটিগুলো
আবার আপনাআপনি ভরে যেতে লাগলো
কবরে। হঠাৎ দমকা হাওয়া বইতে শুরু
করলো চারপাশে। আশেপাশের
গাছপালাগুলো ভয়ংকরভাবে দুলতে লাগলো।
বাতাসের সাথে ধূলিকণা উড়ে এসে সবার
চোখেমুখে ঢুকতে লাগলো। কিন্তু আমি
স্বাভাবিক। আমার কিছুই হলোনা। আমি
দেখতে লাগলাম সবার ছুটাছুটি, যে যেদিকে
পারে ছুটছে। যারা কবর খু্ঁড়তেছিল এতক্ষণ,
তারা সবার আগে পালিয়ে গেল। আর
পুলিশগুলো ছুটলো তাদের পিছুপিছু। আমি
দাঁড়িয়ে মজা দেখছিলাম, কারণ আমি
জানতাম এরকম কিছু একটা হবে। ওরা চলে
যাওয়ার পর পরিস্থিতি শান্ত হলো। আমার
পাশে এসে দাঁড়ালো জেরিনের পাশে এসে দাঁড়ালো জেরিনের অশরীরী
আত্মা। তাকে দেখে আমার মুখে হাসি ফুটে
উঠলো। জেরিন আমার গা ঘেষে দাঁড়িয়ে
বললো:
--ভয় পেয়োনা, কিছুই হয়নি....."
আমি মুখে হাসি নিয়ে বললাম:
--ভয় পাইনি একটুও.... আমি জানি, এটা তুমি
করছো।
--ওরা আর আমার কবর খু্ঁড়ার সাহস
পাবেনা.....
--কিন্তু, পুলিশগুলো আমাকে সহজে ছাড়বে
বলে মনে হয়না......
--সহজে না ছাড়লে ভয় পাওয়ার পর নিশ্চয়ই
ছাড়বে...."
--হুমমম...."
--তুমি কিন্তু আজ আমার কবরে ফুল
দাওনি....
--এনেছি তো ফুল, এই যে......" বলে আমি
একটা রজনীগন্ধা ফুল বের করলাম, তারপর
ওটা জেরিনের কবরে রাখলাম। আর
জেরিনের আত্মা তখন কবরের উপর থেকে
ফুলটা তুলে নিল, তারপর আমার হাত ধরে
বললো:
--চলো হাটি.....
--কোথায় যাবো?"
--পুকুরঘাটে, যেখানে তোমার আমার প্রথম
পরিচয় হয়েছিল।
--হুমমম.....চলো।" তারপর দুজন পাশাপাশি
হাটতে লাগলাম।
.
.
জেরিনের মৃত্যুর পর আমার প্রায় পাগলের
মতো অবস্থা হয়েছিল। কারো সাথে কথা
বলতামনা, ঠিকমতো খেতামনা, পাগলের
মতো পড়ে থাকতাম দিনরাত জেরিনের
কবরের পাশে। একরাতে তার কবরের পাশে
হাটুগেড়ে বসে কান্না করতেছিলাম, তখন
পেছন থেকে একটা মেয়েলী কণ্ঠ শুনতে পাই,
কেউ আমার নাম ধরে মৃদুকণ্ঠে ডাক দিলো:
--রানা......."
কণ্ঠটা শুনে মনে হলো জেরিনের কণ্ঠ।
চমকে তাকালাম আমি পেছনে। দেখলাম
সত্যি সত্যি দাঁড়িয়ে আছে জেরিন। পেছনে
তার ডানা দুইটাও আছে। অবাক হয়ে
জিজ্ঞেস করলাম:
--জেরিন তুমি?"
জেরিন আমার চোখেরজল মুছে দিয়ে
বললো:
--এভাবে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছ কেন?
জানোনা তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে
পারিনা?
--কিন্তু তুমি.....
--হুমমম আমি তোমার জেরিন। কি বিশ্বাস
হচ্ছেনা?
--হচ্ছে, কিন্তু.....
--কিন্তু আমি অশরীরী, তোমার সেই আগের
জেরিন হয়ে আসতে পারিনি, মৃত্যু সবকিছু
পাল্টে দিয়েছে।
--তবুও যে তুমি ফিরে এসেছো, তাতেই আমি
খুশি।" বলেই জেরিনকে জড়িয়ে ধরলাম।
জেরিন বললো:
--এবার থেকে কিন্তু নিজেকে আর কষ্ট
দিতে পারবেনা। ঠিকমতো খাবে, সবার সাথে
কথা বলবে, হাসবে।
--ঠিক আছে, কিন্তু কথা দাও তুমি সবসময়
আমার সাথে থাকবে।
--চাইলেও যে পারিনা। আমি এখন অশরীরী।
দিনের বেলায় আমাদের কোনো অস্তিত্ব
নেই। আমি প্রতিরাতে তোমাকে দেখা
দিবো।
--সত্যি তো? ছেড়ে যাবেনা তো?
--না.... যাবোনা। তোমার কষ্ট সহ্য করতে
পারবোনা আমি।
--তাহলে ঠিক আছে...."
.
.
এরপর থেকে জেরিনের আত্মার সাথে আমার
প্রতিরাতে দেখা হয়, কথা হয়। গতরাতেও
দুজন কথা বলে বলে হাটছিলাম। তখন
দেখলাম কবরস্থানের পাশ দিয়ে ৩ টা যুবক
একটা মেয়েকে জোর করে কোথায় যেন
নিয়ে যাচ্ছিলো। জেরিনকে রেখে আমি এগিয়ে
গেলাম ওদের দিকে। কিছুক্ষণ বুঝালাম ৩
যুবককে। ওরা বুঝলনা, উল্টো আমাকে
মারতে চাইলো। ওদের সাথে হাতাহাতি হলো
কিছুক্ষণ। সেই সময় আমার হাতঘড়িটাও
পড়ে যায় আমার অজান্তে। এক পর্যায়ে
জেরিন তার ডানাদুটো লুকিয়ে আমার পাশে
এসে দাঁড়ালো। তাকে দেখে ৩ যুবকের মাথা
ঘুরে গেল। এত রূপসী মেয়ে তারা আগে
কখনো দেখেনি। হা করে তাকিয়ে থাকলো
তারা কিছুক্ষণ জেরিনের দিকে। জেরিন
তাদেরকে বললো:
--ভাই, আপনারা একটা অসহায় মেয়েকে
এভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন কেন?"
যুবক তিনটে তখন বললো:
--এবার তো তোমাকেসহ নিয়ে যাবো..."
তাদের কথা শুনে আমার মাথায় রাগ উঠে
গেল। ওদেরকে মারার জন্য যেতে চাইলাম,
তখন জেরিন আমাকে বাঁধা দিয়ে ওদেরকে
বললো:
--বেশ, আমি রাজি....চলো কোথায় যেতে
হবে, কিন্তু মেয়েটাকে ছেড়ে দাও।"
তারা মেয়েটাকে ছেড়ে দিলো। জেরিন এবার
আমার দিকে তাকিয়ে বললো:
--রানা, তুমি মেয়েটাকে সাবধানে তার বাসায়
পৌঁছে দিয়ে আসো।"
--ওকে...." বলে আমি মেয়েটাকে নিয়ে চলে
আসতে লাগলাম। পেছন থেকে তিনযুবক
হাসতে হাসতে আমার উদ্দেশ্যে বললো:
--কি ছেলে রে ভাই তুই? নিজের সুন্দরি
প্রেমিকাকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিয়ে অন্য
একটা মেয়েকে নিয়ে চলে যাচ্ছিস?"
জবাবে তাদেরকে আমি কিছুই বললাম না। শুধু
একটু হেসে দিয়ে মেয়েটাকে নিয়ে হাটতে
লাগলাম। আর কল্পনা করতে লাগলাম, একটু
পর তাদের কিরকম নির্মম পরিস্থিতি
হবে......"
.
.
(চলবে.........)
No comments:
Post a Comment