Monday, September 10, 2018

অলৌকিক প্রেম,পার্ট-১



.
বাসায় বসে একা একা খবরের চ্যানেল দেখতেছিলাম।
চ্যানেলে তখন খবর দেখাচ্ছিল, শহরে রহস্যময়ভাবে ৩ যুবক
খুন। কয়েকজনের সাক্ষীতে জানা গেল, রাতে যুবক তিনটে
একটা হোটেল থেকে বের হয়ে কেন্দ্রীয় কবরস্থানের
পাশে ঘুরঘুর করছিল অনেক্ষণ। ভোরবেলায় ৩ জনের লাশ
একসাথে কবরস্থান থেকে কিছুটা দূরে উদ্ধার করে পুলিশ।
শরীরে তাদের কোনো মারের দাগ বা ক্ষতচিহ্ন নেই। কে
মেরেছে তাদের? কীভাবে মেরেছে? তা এখনো রহস্য!
একসাথে তিন যুবকের মৃত্যু, কোনো স্বাভাবিক বা কাকতালীয়
ঘটনা নয়। এই ঘটনা নিয়ে শহরে চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি
হয়েছে ইতোমধ্যে।
.
.
খবরের চ্যানেলটা অফ করে দিলাম। এরকম অনেক ঘটনা ঘটবে
আরো, তা নিয়ে মাথা ঘামানোর সময় নেই। বড় ভাবীর
উদ্দেশ্যে ডাক দিয়ে বললাম:
--ভাবী, এক কাপ চা বানিয়ে আনো তো...."
.
কিছুক্ষণ পর বড়ভাবী চা বানিয়ে নিয়ে এলো। আমি চায়ের কাপে
চুমুক দিলাম, ঠিক তখনই বাইরে শুনা গেল কলিংবেলের শব্দ। বড়
ভাবী বললেন:
--রানা, দেখো তো কে এলো......
.
আমি চায়ের কাপটা রেখে দরজা খুলে দিলাম। বাইরে দেখলাম
কয়েকজন পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। পুলিশ অফিসার আমাকে দেখে
বললো:
--মি.রানা, আমরা আপনার সাথে তিনটে যুবকের খুনের ব্যাপারে কথা
বলতে এসেছি......"
আমি অবাক হয়ে বললাম:
--আমার সাথে? কেন?
--আপনি এই খুনগুলোর ব্যাপারে কিছু জানলে বলুন......
--আমি? আমি কেন এই খুনের ব্যাপারে জানবো?
--আপনি গতরাতে ১১ টার দিকে কোথায় ছিলেন?
--রাস্তায় ছিলাম, বাহির থেকে বাসায় আসিতেছিলাম হেটে হেটে।
--ঠিক কোন জায়গায় ছিলেন তখন?
--মানে কি? আপনি কি বলতে চাইছেন খুনগুলো আমি করেছি?
--মি.রানা, যেটা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দিন। বলুন রাত ঠিক ১১
টায় আপনি কোথায় ছিলেন?
--মনে নেই। টাইম দেখিনি তখন।
--আমি বলছি, ঠিক ১১ টায় আপনি কবরস্থান রোডে ছিলেন। আর
ওখানে যুবক তিনটের সাথে আপনার কিছু একটা নিয়ে কথা কাটাকাটি
হয়।
--হ্যাঁ তো?
--ওরা হয়তো আপনার সাথে হাতাহাতিও করে, যার কারণে আপনার
হাতঘড়িটা ওখানে পড়ে যায়। এই যে, এটা আপনার ঘড়ি, ঠিক তো?"
পুলিশ অফিসার একটা হাতঘড়ি বের করে আমার হাতে দিলেন।
আমি হাতঘড়িটা নিতে নিতে জবাব দিলাম:
--হ্যাঁ এটা আমার ঘড়ি। রাতে আমি কবরস্থান রোডে ছিলাম। ঐ তিন
যুবকের সাথে আমার কথা কাটাকাটি হয়, এবং হাতাহাতিও হয়। তার মানে
এই নয় যে আমি খুন করেছি ওদের।
--কেন ঝগড়া হয় ওদের সাথে?
--ওরা একটা মেয়েকে তুলে এনে জোর করে শ্লীলতাহানি
করতে চেয়েছিল। আমি শুধু বাঁধা দিয়েছি ওদেরকে।
--কিন্তু ওরা খুন হয়েছে কীভাবে?
--কিভাবে খুন হয়েছে তা আমি জানিনা....
--আপনি বলতে চাইছেন আপনার কোনো হাত নেই এতে?
--পারলে প্রমাণ করুন....
--ঠিক আছে, লাশ তিনটে পোস্টমর্টেম করতে নেয়া
হয়েছে। যদি আপনার বিরুদ্ধে কোনো শক্ত প্রমাণ পাই,
তাহলে আপনার কিন্তু খুব খারাপ অবস্থা হবে।
--ধন্যবাদ। আগে পোস্টমর্টেমের রিপোর্ট তো হাতে পান,
তারপর প্রমাণ খুঁজুন আমার বিরুদ্ধ। ওরা কীভাবে মারা গেছে তা
জানতে চেষ্টা করুন।
--আচ্ছা, আসি তাহলে....."
--জি, আসুন। বেস্ট অব লাক.......
.
.
পুলিশগুলোকে বিদায় দিয়ে আমি দরজা অফ করে ভেতরে
আসলাম। মা, বড় ভাবী আর ছোট ভাবী এলো রুমে। মা তো
খুব ভয় পেয়ে গেছে পুলিশ দেখে। আমার গায়ে হাত বুলাতে
বুলাতে মা বললো:
--বাবা বল, তুই কিছু করিসনি তো?"
--আরে মা, বললাম তো আমি খুন করিনি ওদের...." গলার আওয়াজটা
বাড়িয়ে জবাব দিলাম আমি।
--তাইলে ঠিক আছে....." বলেই মা বেরিয়ে গেল রুম থেকে।
দুইভাবীর দিকে তাকিয়ে এবার বললাম:
--কি ব্যাপার, তোমরা যাবেনা?"
ছোটভাবী আমার কান ধরে বললো:
--না, আমরা তোমার সাথে প্রেম করবো এখন।
--হুহ, আমার মতো স্মার্ট, হ্যান্ডসাম ছেলে প্রেম করবে
তোমাদের মতো বুড়ির সাথে? ভাবাই যায়না। যাও ভাগো। আর
বড়ভাবী, তুমি এটা কি চা দিছো? ঠান্ডা চা বানাও নাকি আজকাল?"
এবার বড়ভাবী আমার অপর কানটা টেনে ধরে বললো:
--এতক্ষণ ধরে কি চা টা ঠান্ডা না হয়ে গরম হবে? এতই যখন স্মার্ট
ছেলে, যাওনা একটা বউ নিয়ে এসে দেখাও। নাকি কোনো
মেয়ে পাত্তা দেয়না?
--যতই পাম্প আর উস্কানি দাওনা কেন তোমরা, সফল হবেনা। বিয়ে
আমি করবনা।"
ছোটভাবী বড়ভাবীকে সাপোর্ট করে বললো:
--ভাবী, আমাদের রানা সোনার কখনো বিয়ে হবেনা। ওকে
আসলেই কোনো মেয়ে পাত্তা দেয়না।
--ভাবী, তোমরা জানো যে আমি জেরিনকে ভালোবাসি......."
গলার স্বরটা করুন করে বললাম।
--জেরিন এখন মৃত। ওর চিন্তা মাথা থেকে রেখে এবার একটা
মিষ্টি বউ আনো....." আমার কান ছেড়ে দিয়ে বললো
বড়ভাবী।
--তা হবেনা, তোমরা হয়তো জানোনা, জেরিন এখনো আসে
আমার কাছে।
--হোয়ট!" দুইভাবী চমকে উঠলো আমার কথা শুনে।
--হুমমমম, জেরিন আসে আমার কাছে অশরীরী আত্মা হয়ে।"
--কিসব বলছ? পাগল হয়ে যাওনি তো আবার?"
--না, সুস্থ মস্তিষ্কেই বলছি। জেরিন আমাকে এতো বেশি
ভালোবেসেছে যে, মরার পরেও ছাড়তে পারেনি।
--কি বলছ বুঝছিনা ভাই। তবে সাবধানে থেকো, এসব অশরীরী
জিনিসটাকেই ভয় লাগে আমার।" বলতে বলতে বড় ভাবী
বেরিয়ে গেল। তার পিছুপিছু ছোটভাবীও চলে গেল।।
.
***
.
বিকেলে পুলিশ অফিসারটা আবার এলো বাসায়। উনাকে দেখে
আমি জিজ্ঞেস করলাম:
--কিছু পেলেন আমার বিরুদ্ধে।
--নাহ, পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আমাদের হাতে এসেছে।
--কি বুঝলেন?
--রিপোর্ট ঐ যুবকগুলোর মৃত্যুর কারণ অস্পষ্ট। কিন্তু এমন
তো হওয়ার কথা না। পোস্টমর্টেম বিদ্যাকে মিথ্যে করে
দিলো ঐ তিন যুবকের ডেডবডি। তাদের শরীরে মৃত্যু হতে
পারে এমন কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই......"
--তাহলে মারা গেল কীভাবে?
--আমার মনে হয় তাদের এমন কেউ মেরেছে, যার অনেক
শক্তি......
--কে সে?
--অশরীরী কেউ......
--হোয়াট? আপনি অশরীরী বিশ্বাস করেন?
--কেন? আপনি করেননা? শুনেছি আপনি নাকি রাতের বেলায়
কোনো অশরীরীর সাথে দেখা করতে যান?
--কে বলেছে?
--অনেকেই আপনাকে রাতের বেলায় অনেকবার কবরস্থানে
ঘুরতে দেখেছে। শুনেছি, কবরস্থানে একটা পরীর কবর
আছে।
--হুমমম.......
--আমরা ঐ কবরটা একবার খু্ড়ে দেখতে চাই......
--মানে? কি বলতে চান আপনি?
--মানে আমরা কবরটা খুড়ে দেখতে চাই পরীর লাশটা ওখানে
আছে নাকি নাই.....
--এতে কি প্রমাণ হবে?
--কিছু প্রমাণ হবেনা, শুধু জানতে চাই ঐ কবরে অস্বাভাবিক কিছু
আছে কিনা, যার সাথে এই খুনগুলোর সম্পর্ক আছে।
--না, আপনারা এটা করতে পারেননা....
--আমাদের কাছে গভার্নমেন্ট পারমিশন আছে.... এই দেখুন...."
বলেই পুলিশ অফিসারটা তার হাতে একটা কাগজ দেখালো। আমি ওটা
হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে বললাম:
--বেশ, পরীর কবর খু্ঁড়ে দেখার যখন এতই শখ
আপনাদের,আমি আর বাঁধা দেবোনা.......
--ধন্যবাদ.....
--কবে খুঁড়বেন কবরটা?
--আজ রাতে.......
--বেশ, তাই হবে......
.
.
.
(চলবে............)

No comments:

Post a Comment