Monday, September 10, 2018

অলৌকিক প্রেম,পার্ট-০৩




পুকুরঘাটে বসে আছি অশরীরী জেরিনকে
নিয়ে। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে আমার
দিকে। আমি জিজ্ঞেস করলাম:
--কি দেখ এভাবে?"
--হুমম...? কিছুনা... " অস্ফুটে শব্দ করলো
সে। তারপর একটু নীরবতা নিয়ে বললো:
--তোমার সেই প্রথম দিনের কথা মনে আছে
রানা, আমার পায়ে কাটা ঢুকেছিল, আর তুমি
বের করেছিলে?
--হুমমম....মনে আছে...
--তুমি তখন খুব বোকা ছিলে, আমার পেছনে
ডানা দেখার পর তুমি ভেবেছিলে আমি
সিনেমায় কাজ করি....
--হুমমম, সেই বোকা ছেলেটা আজ আর
বোকা নেই, সব তোমার জন্য হয়েছে।
--কিন্তু আমি প্রেমে পড়েছিলাম সেই বোকা
ছেলেটার, মনে আছে তোমার, আমি যখন
তোমার নাক টেনে দিতাম, তখন তুমি কি
বলতে?
--আমি তো তখন বুঝতামনা, প্রেম কি....
--এখন একটু টেনে দিই তোমার নাকটা?
--হুমমম...." সম্মতি দিলাম আমি।
.
.
জেরিন মুখে হাসি নিয়ে আলতো করে আমার
নাকটা টেনে দিলো। তারপর বললো:
--সেই আগের মতো আমার কোলে মাথা
রেখে শুয়ো তো...."
আমি মাথাটা জেরিনের কোলে রেখে লম্বা
হয়ে শুইলাম। চাঁদের আলো এসে পড়েছে
আমার মুখের উপর। জেরিন আমার মুখে চুলে
হাত বুলাতে লাগলো। কিছুক্ষণ এভাবে
থাকার পর সে আমার নাম ধরে ডাক দিলো:
--রানা.....
--হুমমম?
--আমি বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই এতদিনে
আমাদের বিয়েটা হয়ে যেতো তাইনা?
--হুমম, একটা বাচ্চাও হয়ে যেতো হয়তো.....
--মানুষ বা জীনপরী যাইহোক, বেশি --মানুষ বা জীনপরী যাইহোক, বেশি স্বপ্ন
দেখতে নেই, পূরণ হওয়ার আগেই সব শেষ
হয়ে যায়। জানো, আমি না আমাদের বাচ্চার
নাম সুদ্ধ ঠিক করে ফেলেছিলাম, আমাদের
একটা মেয়ে হতো, আর তার নামটা হতো
তোমার নামের সাথে মিল রেখে....
--কি নাম?
--ইরানা...." বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো
জেরিন।
আমি উঠে বসলাম। তারপর জেরিনের
চোখের দিকে তাকালাম, দেখলাম সে কান্না
করতেছে। আমি বললাম:
--জেরিন, তুমি কাঁদছো?"
তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে জেরিন বললো:
--না, কাঁদছিনা। আচ্ছা রানা, তুমি এখনো
বিয়ে করতেছোনা কেন?
--নাহ, আমি তোমাকে পাইনি, আর বিয়ে
করবোনা।
--তা হয় নাকি পাগল? ইশাকে তো বিয়ে
করতে পারো, একসময় সে তোমাকে
পাওয়ার জন্য কতকিছুই না করেছে।
--বাদ দাও তো এসব, ইশা এখন বিদেশে
থাকে, অনেকদিন যোগাযোগ হয়না তার
সাথে।
--তবুও সে তোমায় অনেক ভালোবাসতো।
--আমি জানি, কেউ আমাকে তোমার মতো
ভালোবাসতে পারবেনা। বাদ দাও এসব।
এখন একটা প্রশ্ন করি?
--কি প্রশ্ন?
--গতকাল তিন যুবককে তুমি কিভাবে
মেরেছো, পোস্টমর্টেমেও তাদের মেরেছো, পোস্টমর্টেমেও তাদের মৃত্যুর
কারণ জানা যায়নি।"
জেরিন একটু হেসে বললো:
--বেঁচে থাকতেই পরীদের কত শক্তি থাকে,
এখনতো আমি অশরীরী পরী, শক্তি আরো
বেড়ে গেছে। যেভাবে ইচ্ছে সেভাবে মারতে
পারি ওদের.....
--কী হয়েছিল বলো তো আমি যাওয়ার পর?
--তুমি যখন মেয়েটাকে নিয়ে চলে যাচ্ছ, তখন
যুবক তিনটে আমাকে ধরে, আমিও হেসে তাল
মেলালাম ওদের সাথে, তারপর ওরা আমার
বুকের দিকে হাত দিতে চাইলো, তিনজনেই
তখন কাঁপতে শুরু করলো। আমি জিজ্ঞেস
করলাম:
--কি হলো ভাই? আমার ইজ্জত নেবেনা?"
তিনজনে তখন একসাথে বললো:
--কে তুমি? আর আমরা এভাবে কাঁপতেছি
কেন?"
তাদের কথা শুনে আমি হেসে উঠে বললাম:
--তোমরা কাঁপতেছো কেন আমি কি করে
বলবে? একটা সুন্দরি মেয়ে তোমাদের সামনে
দাঁড়িয়ে আছে এতরাতে, তোমরা তাকে কিছু
করতে এত সময় নিচ্ছ কেন?
--প্লিজ, আমাদের ভুল হয়ে গেছে। আমাদের
যেতে দাও। কিন্তু আমরা নড়তে পারছিনা
কেন একই জায়গা থেকে?"
তাদের কথা শেষ হতেই আমি আমার আসল
রুপটা দেখায় ওদের। ডানা মেলে কিছুক্ষণ
উড়লাম ওদের চারপাশে। ওরা একই জায়গায়
কাঁপতে শুরু করলো ভয়ে। আমি তখন
ওদেরকে বললাম:
--ধর্ষণকারী এবং ধর্ষণের চেষ্টাকারী
উভয়েই সমান অপরাধী। আর তাদের মতো
কীট পৃথিবীতে না থাকলে পৃথিবী অনেক
সুন্দর হবে। তাই কিছু মনে করোনা,
তোমাদেরকে এই পৃথিবী ছাড়তে হবে।"
ওরা কিছুই বলতে পারলোনা আমার কথার
জবাবে। কারণ আমি তাদের কথা বলার
শক্তিটা রোধ করে দিয়েছিলাম, তারা শুধু
কাঁপতেছিল। আমি তখন উড়া বাদ দিয়ে নিচে
নেমে দাঁড়ালাম, আর ওরা পড়ে গেল মাটিতে।
দেহ থেকে তাদের প্রাণ বেরিয়ে গল। আর
আমি তাদের শরীরটা চোখের ইশারায় দু'ফাক
করলাম। এবং ভয় জিনিসটা যেখানে থাকে,
ওটা মুছে দিলাম। তারপর শরীরটা আবার
বন্ধ করে দিলাম।" কথাগুলো বলেই জেরিন
থামলো।
আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম:
--অশরীরী পরীদের এতো শক্তি?"
জেরিন হেসে বললো:
--এখনো তো অনেক কিছু দেখার বাকি....."
.

No comments:

Post a Comment