Thursday, February 7, 2019

বিয়ার গ্রিলসের জীবনের হার না মানা একটি ছোট গল্প...

চ্যানেলে ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ড অনুষ্ঠানটি দেখেননি এমন লোক কমই পাওয়া যাবে । অনুষ্ঠানটি
যার কারণে সারা বিশ্বে এতো
জনপ্রিয়তা পেয়েছে তিনি হচ্ছেন
এডওয়ার্ড মাইকেল বিয়ার গ্রিলস
(Bear Grylls) । সবার কাছে
বিয়ার গ্রিলস নামেই পরিচিত।
.

.
তিনি একাধারে একজন লেখক,
টেলিভিশন অনুষ্ঠানের উপস্থাপক,
সাবেক সেনা কমান্ডো ও বর্তমানে
বিশ্ব স্কাউট সংস্থার চীফ অব
স্কাউট । শুধু টিভির পর্দায়ই নন,
ডিসকভারি তার ব্যক্তিগত জীবনের সংগ্রামও হার মানায় ম্যান ভার্সেস ওয়াইল্ডের রোমাঞ্চকে ।
.
পাই ফিঙ্গার্স মোটিভেশনের
এবারের আয়োজনে থাকছে বিয়ার
গ্রিলসের হার না মানা জীবনের
গল্প । বিয়ার গ্রিলস ১৯৭৪
সালের ৭ জুন নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা স্যার মাইকেল গ্রিলস ছিলেন কনজারভেটিভ পার্টির রাজনীতিবিদ এবং মা লেডি গ্রিলস ।
.

.
তিনি ইটন হাউস, লুগ্রোভ স্কুল এবং ইটন কলেজে পড়াশোনা করেছেন। ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন । গ্রিলস ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন এবং ইউনাইটেড কিংডম স্পেশাল
ফোর্স রিজার্ভে কাজ করেন
ছেলেবেলা থেকেই বিয়ার গ্রিলস
ছিলেন ডানপিটে। বাবার কাছ থেকে নৌকা চালানো আর
পাহাড়ে চড়া শিখেছেন একেবারে
ছোটবেলায়। যখন তার বয়স আট তখনই তিনি কাব স্কাউট হন। সেই সময়েই বেয়ারের বাবা মাউন্ট এভারেস্টের ছবি দেখিয়ে বলেছিলো, এর চুড়ায় উঠতে পারবে তুমি? ছেলেটি বুঝেই
হোক আর না বুঝেই হোক, সেদিন
বলেছিলো সে পারবে ।
.
তখন থেকেই স্বপ্ন দেখতেন এভারেস্ট জয়ের । এই স্বপ্ন থেকেই
অ্যাডভেঞ্চারের বীজ বপন হয় তার মনে । কিন্তু এর ভেতরই একদিন ঘটে গেলো একটি দুর্ঘটনা।
.
জাম্বিয়াতে ফ্রি ফল প্যারাশুটিং
করার সময় মারাত্মক আঘাত পায় সে, শিরদাঁড়ার তিনটা কশেরুকা ভেঙে যায় । ডাক্তার জানিয়ে দেয়, এজীবনে আর সে হাঁটতে পারবেনা কোনোদিন। হুইলচেয়ারে কাটিয়ে দিতে হবে বাকিটা জীবনটা । তখন
আর্মির চাকরিও চলে যায় তার ।
.

.
সামনে তখন বাকিটা জীবনটা
পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে কাটিয়ে
দেয়ার অপেক্ষা । কিন্তু মনের ভেতর হিমালয়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গে দাঁড়িয়ে বিজয়ীর চিৎকার দেয়ার ইচ্ছেটা তখনো দমে যায়নি ।
স্রেফ অদম্য ইচ্ছাশক্তি থেকে
ছেলেটা ১ বছরের ভেতর হুইলচেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়, হাঁটতে শুরু করে সে । এরপর দৌঁড়ানো শুরু করে। ডাক্তারদের সব ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যে প্রমাণ করে দেয় । উঠে দাঁড়ানোর মাত্র ৬ মাসের মাথায় তার ২৩ বছর বয়সে ছেলেটি মাউন্ট এভারেস্ট জয় করে ফেলে । সেই ছেলেটিকে আমরা সকলেই চিনি তুমুল জনপ্রিয় Man Vs Wild
অনুষ্ঠানের মাধ্যমে । প্রতিনিয়ত বন বাদাড়ে, সমুদ্রে, আকাশ চষে বেড়িয়ে দেখাচ্ছেন এই কশেরুকা ভেঙে যাওয়া বেয়ার গ্রীলস । স্যালুট তাকে । আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, জীবনে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য শুধুমাত্র অদম্য ইচ্ছাশক্তিই যথেষ্ঠ ।
.

.
আর জীবনে একটি দুইটি ঝড় এসে সব ভেঙ্গে চুরে আপনাকে ব্যর্থতার
আস্তাকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিল? আপনি খড়কুটোর মতো উড়ে গেলেন । মানুষ ভাঙতে ভাঙতে গড়ে, পড়তে পড়তে হাটতে শিখে- এটাই মানুষকে অন্য সব প্রাণী থেকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে দাঁর করিয়েছে । চাকরি পাচ্ছেন না, ব্যবসা করতে গিয়ে সর্বশান্ত হয়ে গেছেন, গার্লফ্রেন্ড ছেড়ে গেছে, বউ ডিভোর্স দিয়েছে, ব্যাস এটুকুতেই কাত হয়ে গেলেন আপনি ? আহত বাঘের মত শেষ একটা থাবা বসান নিজের লক্ষ্যে আবারো । একটা মানুষ হুইলচেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ানোর ৬ মাসের মাথায় মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছে । আর আপনি শুধু বুদ্ধিমানের মত ঠান্ডা মাথায় নিজের সমস্যার সমাধান করে আবারো জীবনে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন না নতুন করে ?

No comments:

Post a Comment