Saturday, September 1, 2018

মা আমার বিয়ের বয়স...

ঘুম ভাঙ্গার পর চোখ খোলা মাত্রই দেখি কতগুলো অপরিচিত চেহারা আমার মুখের উপরে উৎসুক ভঙ্গিতে ঝুঁকে আছে। তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম। আমাকে লাফিয়ে উঠতে দেখে সেই মুখগুলো হতে একজন আমাকে বলল," ভয় পাওয়ার কিছু নেই। আমরা দেখছিলাম ঘুমালে আমাদের জামাইকে কেমন লাগে?"
কথাটা শুনে আমার মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছিল না। আমি হা করে সবার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
"আমাদের জামাই" মানে কি?
দেখলাম মা পাশে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি মাকে জিজ্ঞেস করলাম,"এসব কি মা?"
মা আমার পাশে এসে মৃদুস্বরে আমাকে বললেন," ভয় পাস নে। ওরা তোর শ্বশুরপক্ষের লোক। তোকে দেখতে এসেছে।"
মার কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। সারাজীবন দেখে এলাম ছেলেপক্ষ মেয়েকে দেখতে যায়। আমাকে মেয়ে পক্ষই দেখতে এসেছে? নিজের শরীরের দিকে তাকালাম। সব তো ঠিকই আছে। দৌড়ে আয়নার কাছে গেলাম। না আমি ছেলে ঠিকই আছি। তাছাড়া আমার মা তিনিও কীভাবে এসব মেনে নিচ্ছেন? মাথায় কিছুই ঢুকছে না আমার।
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছিলাম এমন সময় মা পিছন থেকে বললেন, "থাক! আর নিজের রূপ এভাবে বারবার দেখতে হবে না। ফ্রেশ হয়ে আয়। উনারা অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন তোর জন্য। কনেও বসে আছে তোর সাথে কথা বলবে বলে। তাড়াতাড়ি আয়।"
আমি মায়ের কাছে গিয়ে বললাম," মা তোমার কি মাথা নষ্ট হয়ে গিয়েছে? আমার এখনও কি বিয়ের বয়স........."
আমাকে শেষ করতে দিলেন না উনি।
আমি শেষ করার আগেই উনি বলা শুরু করলেন," থাক এসব বুঝাতে হবে না আমাকে। ভালো সম্বন্ধ পেয়েছি। মেয়েও সুন্দরী, পড়ালেখায় ভালো। বিয়েটা দিতে পারলেই আমি বাঁচি।"
এটা বলেই মা চলে গেলেন। আক্ষেপ নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলাম। ব্রাশ করতে করতে নিজের মাথার চুল নিজের ছিঁড়তে ইচ্ছে করছিল। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে ভালো থেকে কাপড়চোপড় পরে রেডি হলাম। আমি রেডি হতে হতেই মা আবার আসলেন। এসে বললেন," চল আমি নিয়ে যাই তোকে। তুই তো লজ্জা পাচ্ছিস দেখি সকাল থেকে।"
আমি মাকে বললাম," লজ্জা নয়, ভয় পাচ্ছি। তুমি আমার মা তো? এমন কাজ কীভাবে তুমি করছো? লজ্জা তো তোমার পাওয়া উচিত।"
ঠাস করে আমার এক গালে থাপ্পড় মেরে দিলেন উনি। আমি গাল ধরে বসে রইলাম। কি মনে হতেই আমার আরেক গালেও থাপ্পড় মেরে দিলেন মা। থাপ্পড় মেরে বললেন, " একটা গালে মারলে তোর বাচ্চাকাচ্চা হলে বিকলাঙ্গ জন্ম নিবে। তাই আরেক গালেও মেরে দিলাম।"
মার কথাবার্তা যত শুনছি আমি তত বিকলাঙ্গ হয়ে যাচ্ছি। আস্তে করে মাকে বললাম," বাচ্চাকাচ্চা তো আমার হবে না মা। আমার বৌ এর হবে।"
চোখ রাঙ্গিয়ে ভয় দেখিয়ে মা আমাকে হাত ধরে টেনে ড্রয়িংরুমে নিয়ে আসলেন। ড্রয়িংরুমে এসে দেখি আট দশজন নারীপুরুষ বসে আছেন। ঘুম ভাঙ্গার পরপরই আমি যে চেহারাগুলো দেখেছিলাম সেগুলোও এখানে আছে ।
আমাকে দেখেই একজন বলে উঠল, "ঐ তো আমাদের জামাই চলে এসেছে।"
একসাথে সবাই আমার দিকে তাকালো। আমার নিজেকে চিড়িয়াখানার জন্তু বলে মনে হচ্ছিল। আমি গিয়ে একটা খালি সোফা দেখে বসলাম। ধীরে ধীরে রাগ বাড়ছিল আমার। কিন্তু কিছু বলতে বা করতে পারছিলাম না কারণ পাশে মা বসে আছেন। রেগে গিয়ে সবার সামনে কিছু বলে ফেললে মানসম্মান থাকবে না আর।
যারা দেখতে এসেছে তাদের মধ্যে থেকে একজন আমাকে জিজ্ঞেস করল," তোমার নাম কি বাবা?"
আমি চুপ করে রইলাম।
মা চোখ বড় করে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।
আমি আস্তে করে বললাম," অভি।"
হঠাৎ বয়স্ক একজন হেসে হেসে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন," আমাদের জামাই এর ধোঁয়ার অভ্যাস-টভ্যাস আছে নাকি কোনো?"
রাগে পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে আমার।
আমি বলার আগেই মা বললেন," আমার ছেলে এসব ছাইপাশের আশেপাশেও থাকে না।"
আমার খুব বলতে ইচ্ছে হলো," হ্যাঁ ধোঁয়া খাই তো। মশার কয়েলের ধোঁয়া, বাসের ধোঁয়া, ট্রাকের ধোঁয়া প্রতিদিন খাই আমি। তোর কি সমস্যা? "
কিন্তু আমি বিদ্রোহী হতে চেয়েও হতে পারছি না। কারণ পাশে মা বসে আছেন।
আমি চুপ করে রইলাম। একজন মধ্যবয়স্ক মহিলা বলে উঠলেন," রুশা তোর বর পছন্দ হয়েছে তো?" বলেই হো হো করে হেসে উঠলেন তিনি।
এতক্ষণ বসে আছি কিন্তু আমি কনের দিকে খেয়াল করার সময় পাইনি।
রুশা নামে মেয়েটার দিকে তাকালাম। টুকটুকে লাল রং এর জামা পড়ে বসে আছে মেয়েটি। আমার দিকে বারবার তাকাচ্ছে। মেয়েটা যেমন লাল জামা পড়েছে চেহারাটাও তেমনি লালচে টাইপের। মেয়েটার দিকে তাকাতে আমার কেমন জানি অস্বস্তি লাগছিল।
রুশা আমাকে জিজ্ঞেস করল, "আপনার সিজিপিএ কেমন?"
এ কেমন মেয়ে? সরাসরি পড়াশোনাতে চলে গেল! ভার্সিটির পেশাদার সাপ্লি-ইম্প্রুভ পরীক্ষার্থী আমি। মাকেও তো এসব কিছু বলি নি আমি। কীভাবে কি বলব বুঝে উঠতে পারছিলাম না।
আমি কিছু বলার আগেই মা বলে উঠলেন," ও তো পড়াশোনায় খুব ভালো। রেগুলার ভার্সিটি যায়। জিপিএ ও ভালো আছে।"
রুশা বলল," মার্কশীট দেখা যাবে?"
আমি রেগে উঠে দাঁড়ালাম। মা আমাকে টেনে বসালেন। একজন আমাকে বললেন," বাবা একটু হেঁটে দেখাও তো।"
উনার চৌদ্দগুষ্টি ধরে সালাম দিতে ইচ্ছে করছে আমার। মা আমাকে বললেন," রাগ করছিস কেন? একটু হেঁটে দেখা না উনাদের।"
আমি দাঁড়িয়ে রইলাম। রুশা ওর মাকে বলল," মা ছেলে ল্যাংড়া নাকি কোনো?"
এদিকে আমার মা রেগে গিয়ে বলে উঠলেন," কিরে তুই হাঁটবি? গরুর মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?"
এই শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে মায়ের যা-তা বলা শুরু হচ্ছে। আমি একটু হেঁটে দেখালাম উনাদের।
মেয়ের মা বললেন," পাঞ্জাবি পড়লে ছেলেকে কেমন দেখায়?"
রাগে- অপমানে আমার চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। রেগে গিয়ে বললাম," সেটা আপনার কেন লাগছে? বিয়ে কি আপনি করবেন? "
অনেকক্ষণ ধরে ক্ষোভ পুষিয়ে রেখেছিলাম। কথাটা বলার পর থেকে কিছুটা হালকা লাগছে। সবাই কটমট করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মা উঠে দাঁড়িয়ে সবাই বললেন," আসলে আমি দুঃখিত। ওকে নিয়ে একটু ভিতরে যাচ্ছি আমি। "
এটা বলে মা ভিতরের রুমে নিয়ে আসলেন আমাকে। আসা মাত্রই কষে থাপ্পড় দিয়ে বসলেন আমাকে। বললেন," তুই কি আমার মানসম্মান খাবি?"
আমি মাকে বললাম," আমার মানসম্মান তো অলরেডি খেয়ে দিয়েছো তুমি। আমি বিয়ে করব না।"
আমি যতবারই বলছি 'বিয়ে করব না' ততবারই মারতে লাগলেন আমাকে। ওটা ছাড়া আর কিছু আমাকে বলারও সুযোগ দিচ্ছেন না তিনি। হঠাৎ আমার মাথায় জোরে আঘাত করে বসেন মা। মাথা চক্কর দিয়ে উঠল। এরপর আর কিছু মনে নেই।
জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করলাম আমি। মা আমার দিকে ঝুঁকে রয়েছেন।
আমি চোখ মেলা মাত্রই আমাকে বললেন," কি হয়েছে তোর? ঘুমের ঘোরে না না বলছিলি কেন বারবার? স্বপ্ন দেখছিলি নাকি?"
তার মানে এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলাম আমি।
খুশিতে লাফিয়ে উঠলাম আমি। আমি লাফাতে লাফাতে মাকে বললাম, "কিছু না। তুমি গিয়ে ভালোমতো নাস্তা রেডি করো।"
মা বের হতে হতে আমাকে বললেন, " আচ্ছা ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আয়। বাসায় মেহমান এসেছেন। উনারাও তোর জন্য নাস্তা না করে বসে আছেন।"

No comments:

Post a Comment