Thursday, August 30, 2018

(গল্প) নিরবতা, পার্ট-০৪


…………………………………………………………………………
নিলাদ্রী একটু লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বলল,
_প্রপোজ করো আমায়? (নিলাদ্রী)
,
আমি তো অবাক হয়ে নিলাদ্রীর মায়াবী মুখের দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম। কি বলছে এসব নিলাদ্রী? প্রপোজ করব মানে? আমরা না ফ্রেন্ডস? মানলাম নিলাদ্রী মেয়ে তাই বলে কি? 
_কি হলো আরিফ? (নিলাদ্রী)
,
নিলাদ্রীর কথা শুনে নিলাদ্রীর মায়াবী চেহারার উজ্জল মুখ থেকে আমার দৃষ্টি সরিয়ে নিয়ে বললাম,
_কি? (আমি)
,
_কি দেখলে অমন করে?
,
_কি দেখলাম?
,
_তুমি আমার মুখের দিকে অমন করে তাকিয়ে ছিলে কেন?
,
_না এমনিতেই।
,
_ওহহ, তো প্রপোজ কর আমায়?
,
_জানো ণিলাদ্রী? আজ তোমায় দেখে আমার কোনো এক মনুষীর কথা মনে পড়ছে?
,
_মানে?
,
_কোনো এক মনুষী বলেছিলেন।
,
_কি বলেছিলেন?
,
_'একটি ছেলে আর একটি মেয়ে কখনোই বন্ধু হতে পারে না।'
,
_কেন?
,
_তার প্রমাণ তো তুমি নিজেই। মনুষী আরোও বলেছিলেন, 'একটি ছেলে এবং একটি মেয়ের মাঝে যদিওবা বন্ধুত্ব হয় তবে, বন্ধুত্ব বেশিদিন টিকে থাকে না। হয় ছেলেটি মেয়েটির প্রেমে পড়বে, না হয় মেয়েটি ছেলেটির প্রেমে পড়বে'। 
,
_হুম, কিন্তু হঠাৎই এই কথা মনে পড়ল কেন?
,
_তা তো বলতে পারব না। তবে তার প্রমাণ আজ আমি নিজ হাতেই পেলাম। তুমি এসেছিলে আমার জীবনে বন্ধু হিসেবে। দেখ, সেই তুমি আজ আমার প্রেমিকা হতে চাচ্ছো।
,
_হুম চাচ্ছি।
,
আমি নিরব হয়ে থাকলাম। কি করব বুঝে উঠতে পারতেছি না। আমার কি নিলাদ্রীর ভালোবাসা গ্রহণ করা উচিৎ নাকি না?
_আরিফ? (নিলাদ্রী) 
,
_হুম।
,
_কি হলো? কি ভাবছো অত?
,
_ভাবছি। আমার কি তোমাকে প্রপোজ করা উচিৎ?
,
আমার কথা শুনে নিলাদ্রীর হাস্যজ্জল মুখ থেকে কেন জানি না তার হাসির ছাপ নিমিষেই মিলিয়ে গেল। হয়তবা কথা শুনে তার মন খারাপ হয়ে গেছে।
_ওমা, তুমি আবার মন খারাপ করলে কেন? (আমি)
,
_মন খারাপ হবে না?
,
_কেন হবে?
,
_যদি তুমি আমার প্রপোজ একচেপ্ট না করো।
,
_আরে বাবা, আমি কি এখনও বলছি তোমায়?
,
_তারমানে তুমি রাজি?
,
_হুম রাজি!
,
_সত্যি।
,
_হুম সত্যি।
,
_আই লাভ ইউ সো মাচ।
,
বলেই নিলাদ্রী আমাকে জড়িয়ে ধরল। 
_জানো আরিফ? (নিলাদ্রী)
,
_কি? (আমি)
,
_আমি এতদিন এই দিনটার জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু কোনোদিনও ভাবিনি আমার স্বপ্ন এভাবে পূরণ হবে। আমি আজ খুবই খুশি। জানো খুবই খুশি।
,
_আচ্ছা, এবার ছাড়ো আমায়?
,
_না ছাড়ব না?
,
_আরে ছাড়ো তো। কেউ দেখে ফেলবে?
,
_দেখলে দেখুক।
,
_নিলাদ্রী?
,
_হুম বলো?
,
_ছাড়ো প্লিজ।
,
_আচ্ছা।
,
নিলাদ্রী ছেড়ে দিল। আমি নিলাদ্রীর চেহারার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। সেদিন এর মত কোনোমতে নিলাদ্রী এর কাছে থেকে চলে এলাম। 
,
এভাবে আমাদের প্রেমের প্রায় ২ বছর চলে গেল।
এইচ এস সি তেও তেমন একটা ভালো রেজাল্ট হলো না। তাই ঠিক করলাম আর পড়ালেখা করব না। কিন্তু আমায় জোড় করেই বি এ তে ভর্তি করিয়ে দিল বাবা। আর নিলাদ্রী ইংলিশ নিয়ে অনার্সে সরকারি একটা ইউনিভার্সিটি তে সুযোগ পেল। ভালোই পড়ালেখা চলছে তার।
,
আমাদের মাঝে দুরুত্বটা বাড়তে থাকল এইচ এস সি রেজাল্ট এর পর থেকেই। নিলাদ্রী মাঝে মাঝে ফোন করত। হয়তবা আমি ব্যস্ত থাকতাম তাই রিসিভ করতে পারতাম না। কিন্তু আমি যখন ফোন দিতাম তখন নিলাদ্রী রিসিভ করত না। এভাবেই। চলছিল আমাদের রিলেশন।
,
সময় যতই সামনে এগিয়ে যেতে লাগল। আমার আর নিলাদ্রীর মাঝে দুরুত্ব ততই বাড়তে লাগল। মাঝে মাঝে তো নিলাদ্রী অল্পতেই রাগারাগি করত। পান থেকে চুন খশতে দিত না। একদিন তো নিলাদ্রী ফোনে বলেই দিল,
_আরিফ? (নিলাদ্রী)
,
_জ্বী বলো? (আমি)
,
_তুমি কি আমার সাথে দেখা করতে পারবে?
,
_কখন?
,
_এখনই?
,
_আচ্ছা, কোথায় আসব?
,
_যেখান থেকে আমাদের প্রেমের শুরু হয়েছিল।
,
_আচ্ছা আমি আসতেছি।
,
নিলাদ্রী ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল। আমি চলে গেলাম সেই জায়গায়, যে জায়গায় নিলাদ্রী আমায় নিজে থেকে প্রপোজ করেছিল। আমি প্রপোজ একচেপ্ট করব না ভেবে নিলাদ্রীর চোখে অশ্রু টলমল করছিল। আমি হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে সে মনের কথাগুলো বলতে ভয় পাচ্ছিল। 
,
সেই পুরোনো নিলাদ্রী আর এখনকার নিলাদ্রীর মধ্যে অনেক পার্থক্য। অতীতের স্মৃতিগুলো মনে মনে পড়তেই আমার দুচোখের কোনো অশ্রু জমা হলো। ইচ্ছে করছে অঝোর ধারায় কাঁদি। কিন্তু ছেলেদের যে কাঁদতে মানা। ছেলেরা কাঁদলে তো সব কিছুই ধব্বংশ হয়ে যেতে চায়। তাই চোখের কোণে অশ্রু জমে থাকলেও কাঁদতে নেই ছেলেদের। পিছন থেকে আমার নাম ধরে ডাকল।
,
_আরিফ? (নিলাদ্রী)
,
কন্ঠ শুনেই বুঝলাম নিলাদ্রী। এই সেই চেনা কন্ঠ। যে কন্ঠস্বর না শুনলে আগে আমার দিনটাই ভালো কাটত না।
,
_হুম নিলাদ্রী? (আমি)
,
_আমি তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই?
,
_হুম বলো?
,
_কিন্তু আমি ভেবে পাচ্ছি না, তোমাকে কথাগুলো কিভাবে বলব?
,
_তুমি নির্দিধায় বলো?
,
_আসলে আরিফ?
,
_হুম বলো?








(শেষ পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন)

No comments:

Post a Comment