(১)
ঘুম থেকে উঠে ফেসবুকে ঘুরাঘুরি করছে রফি।চোখে তখনো ঘুমের আবেশ।অর্ধ গায়ে কম্বলের আবরণ।অন্ধকার রুম।
এমন সময় আতংক মাখা কণ্ঠে "ভাউউউ।"
রফি ভয়ে লাফিয়ে উঠলো।
অবস্থা দেখে নিধী হাসিতে কুপোকাত।
- পেত্নীর মতন হাসছিস কেনো?
- তো কি করবো?
- কি করবি মানে?সকাল সকাল জ্বালানো ছাড়া কোনো কাজ নেই তোর?
- না নেই,সমস্যা?
- অবশ্যই সমস্যা।
- ভালো।কার সাথে চ্যাটিং করছিলি?
- গার্লফ্রেন্ড।
কথাটা শোনা মাত্র অগ্নি দৃষ্টিতে তাকালো নিধী।যেনো রফি ভুল কিছু বলে ফেলেছে।তারপরি শুরু করলো....
- ওই শালা বান্দর,তোর বাপের সাহস আছে প্রেম করার!এই চেহারা নিয়ে গার্লফ্রেন্ড শব্দ মুখে আনতে লজ্জা করেনা?কুত্তা,বিলাই..তুই অন্য মেয়ের হবি!তোর দাত চুল নাক একটাও থাকবেনা।গরু,ছাগল,উট।আংকেলকে বলে তোর কুরবানি যদি না দেওয়াইছি।
- ভালো কথা মনে করিয়ে দিলি।ইদে আমি আর দ্বিপা নদীর পাড়ে যাচ্ছি,তুই যাবি আমাদের সাথে?
- যা না যা।নদীর পাড়ে কেনো!পার্কে যা।তবে মানে রাখিস পরবর্তীতে যাওয়ার জন্য পা দুটো থাকবেনা।
- এমন ওপেন থ্রেড দিচ্ছিস কেনো?আমি গেলে তোর প্রব্লেম কি?
- তুই যাবিনা ব্যস।
- ভেবে দেখবো।আপাতত এক কাপ কফি দে।
- পারবোনা।তোর দ্বিপা আছে কি করতে!
- দিবিনা বললে পারিস।
নিধী কিছু না বলে রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
<দশ মিনিট পর>
- এইনে তোর কফি।
- একটু আগে তো বললি দিবিনা।
- হুম বলছি।
- এখন তাহলে দিলি কেনো?
- আমার ইচ্ছা।
মেয়েটার ব্যবহার দেখে রফি কাপ হাতে নিলো।তারপর মুগ্ধতার সাথে কয়েক চুমুক।সামনে নিধী দাঁড়িয়ে।অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে প্রিয় মানুষটার দিকে।মনে প্রশংসা শুনার আক্ষেপ।কিন্তু রফি কিছু না বলে কফিতে চুমুক দিয়ে যাচ্ছে।
অতঃপর নিধী নিজ থেকে জিজ্ঞাসা করলো....
- কেমন হয়েছে?
- চমৎকার।তুই আমার বউ হলে এর জন্য খুশি হয়ে মাস্ট বি একটা কিস উপহার দিতাম।
- তো দে।
- কি?
- এই না,কিছুনা।
- আমি যে শুনলাম।
- আম্মু ডাকছে।রুমে গেলাম।দুপুরে আমাদের ফ্লাটে আসিস।আব্বু কার্ফু মাছ এনেছিলো।ডিম বের হয়েছে।তোর জন্য রান্না করে রাখবো।
- পরে,আগে একটু মাথা টিপে দে।
- আমার ঠেকা।
- আচ্ছা তাহলে যা।
নিধী গেলোনা।চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ভেবে নরম হাতে রফির মাথা স্পর্শ করলো।কি সে মধুর ছোঁয়া।সারা শরীর শিউরে উঠতে যথেষ্ট।
(২)
দুপুরে কলিংবেল বাজতে দরজা খুলে গেলো।সামনে হলুদ শাড়িতে অপরূপা দাঁড়িয়ে।ছাড়া চুল।চোখে টানা মাশকারা।ঠোঁটে গোলাপি লিপগ্লোজ।হাতে লাল নীল চুড়ি।মুখ অভিমানে মাখা।
তাঁর মিষ্টি কণ্ঠে ভেসে এলো "এতো দেরী কেনো?"
রফি মাথা নিচু করা জবাব দিলো "তুই মাথা টিপে দেওয়ার পর সেই যে ঘুমিয়েছি।ঘুম থেকে উঠে দেখি দেড়টা বাজে।পরে তাড়াহুড়া করে গোসল করে এলাম।"
"তারমানে সকালে নাস্তা করা হয়নি?"
"না।"
হঠাৎ নিধীর চোখ গেলো হাতের দিকে।সাদা বেন্ডেজ কাপড়ে মোড়ানো হাতের তালু।ব্যপারটা তাকে অস্তির করে তুললো।কোমল স্বরে জিজ্ঞাসা করলো "কি হয়েছে হাতে?"
রফি এক পলক নিজ হাতের দিকে তাকিয়ে বললো "গোসল করার সময় বেসিংয়ে লেগে কেটে গেছে।"
"কিভাবে কি করিস!খেয়াল থাকেনা!আয়,ভেতরে আয়।"
রফি রুমে প্রবেশ করে নিধীর পিছু পিছু ডায়নিং রুমে গেলো।নিধীর বাবা-মা সেখানে বসে।
রফিকে দেখে তাঁরা জিজ্ঞাসা করলো "কেমন আছো বাবা।"
রফি কিছু বলতে যাবে ঠিক তখন নিধী অভিমান মাখা সুরে বললো "কেমন আর থাকবে।গোসল করতে গিয়ে হাত কেটে নিয়েছে।খেয়াল কোথায় থাকে আল্লাহ্ জানে।"
নিধীর আম্মু বললো "ওহ্ গড,আচ্ছা বসো।আমি খাইয়ে দিচ্ছি।"
রফি কিছু না বলে চেয়ারে বসলো।
নিধী খাবার বাড়তে বাড়তে বললো "না আম্মু,তুমি খাও।ওকে আমি খাইয়ে দিচ্ছি।"
মেয়ের কাণ্ড দেখে সাদিকুর সাহেব স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে হাসি মুখে বললো "ওদের টা ওদের সামলাতে দাও।"
তারপর আর দুই একটা কথা হলো।কিন্তু নিধী তাতে কান না দিয়ে খুব যত্ন করে রফি-কে খাইয়ে দিতে ব্যস্ত।
রফি!
সে নিশ্চুপ।অপরূপার হাতে খাওয়ার সময় কথা বলা তাঁর পছন্দ নয়।
এভাবে খাওয়ার পর্ব চলতে লাগলো।
ভাগ্যক্রমে রসিকতা হোক বা বাস্তবতা।সাদেকুর সাহেব হঠাৎ বলে উঠলো "বুঝলে বাবা,আমার এক বন্ধুর ছেলে।দেখতে শুনতে খুবি ভালো।লেখাপড়া শেষ করে মুটামাটি একটা জব করছে।ভাবছি নিধীর বিয়ে ওর সাথে দিবো।তুমি কি বলো?"
কথাটা শোনা মাত্র সবার মুখ শুকিয়ে গেলো।গলা দিয়ে কারো ভাত নামছেনা।নিধী প্লেট হাতে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে।
রফি খুব কষ্ট সহকারে ভাত গিলে জবাব দিলো "আপনি যা ভালো মনেকরেন আংকেল।"
নিধীর আম্মু অবশ্য ব্যাপারটায় সাঈ না দিয়ে রাগি গলায় বললো "তোমার মাথা ঠিক আছে?আমি ছোটো থেকে জামাই পছন্দ করে রেখেছি।এছাড়া রফির পরিবারের সবাই নিধীকে বৌমা বলে ডাকে।এখন তুমি আসছো প্যাচ লাগাতে?"
সাদেকুর সাহেব হাসলেন।এমন কিছু শুনার জন্য তিনি আগে থেকে প্রস্তুত ছিলেন।অতঃপর ছল কশে তিনি বললেন "আমিও কিন্তু একি কথা বলতে চাচ্ছিলাম।কি বাবা তোমার অমত নেই তো!তোমার আব্বুর সাথে কিন্তু কালকে কথা পাকাপাকি হয়ে গেছে।"
লোকটা অদ্ভুত হলেও খুব রসিক।তাঁর কথা বুঝার ক্ষমতা কারো নেই।
তবে যতটা সম্ভব রফি বুঝে জবাব দিলো "নিধী রাজি থাকলে আমি আর কোন গোয়ালের গরু।"
সবাই এক সাথে হেসে উঠলো।সকলের চেহারায় আনন্দ।লজ্জা শুধু লজ্জাবতীর মুখে।তবে এটা শুধু লজ্জা বললে ভুল হবে।
ধীরে ধীরে নিধীর মুখ লাল বর্ণ ধারণ করলো।
তারপর সে ওড়না দিয়ে কোনোভাবে মুখ ঢেকে দৌড়ে পাশের রুমে চলে গেলো।
.
No comments:
Post a Comment